মানুষের চামড়া দিয়ে বানানো চেয়ার-ল্যাম্প আর এক নারীর নৃশংসতা: ইলসে কোচের ভয়ানক ইতিহাস

 ইলসে কোচ নাৎসি জার্মানির ভয়াল ইতিহাসের এক নারী চরিত্র, যাকে বলা হয় ‘বুচেনভাল্ডের জাদুকরী’। তার বিরুদ্ধে মানুষের চামড়া সংগ্রহ করে ল্যাম্পশেড ও আসবাব বানানোর অভিযোগ আছে।

ইলসে কোচের একটি সাদাকালো ছবি, পাশে নাৎসি ক্যাম্পের দৃশ্য ও একটি পুরনো চেয়ার
ইলসে কোচের একটি সাদাকালো ছবি, পাশে নাৎসি ক্যাম্পের দৃশ্য ও একটি পুরনো চেয়ার

এক নারীর নামেই কাঁপে ইতিহাস

ইতিহাসে এমন অনেক পুরুষ আছেন যারা যুদ্ধ বা দমন-পীড়নের জন্য ঘৃণিত। কিন্তু নারী? ইলসে কোচ সেই ব্যতিক্রম যার নাম এক নৃশংস ও বিকৃত মানসিকতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বুচেনভাল্ড কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের এই নারী অফিসার শুধু একজন সহযোগী বা সহধর্মিণী ছিলেন না তিনি নিজেই এক ভয়াল অধ্যায়ের নায়িকা (বা খলনায়িকা)।

ইলসে কোচের একটি সাদাকালো ছবি, পাশে নাৎসি ক্যাম্পের দৃশ্য ও একটি পুরনো চেয়ার

কে ছিলেন ইলসে কোচ?

ইলসে কোচ (Ilse Koch), জন্ম ২২ সেপ্টেম্বর ১৯০৬ সালে জার্মানির ড্রেসডেনে।
১৯৩২ সালে তিনি নাৎসি পার্টিতে যোগ দেন এবং পরে বিয়ে করেন এসএস কর্মকর্তা কার্ল কোচকে। তাদের পোস্টিং হয় বুচেনভাল্ড কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে, যেখানে তারা চালান নির্যাতনের সাম্রাজ্য।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ কী ছিল?

ইলসে কোচের বিরুদ্ধে যেসব ভয়ঙ্কর অভিযোগ রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল—

🔸 বন্দিদের দেহে যদি উল্কি থাকত, তাহলে তাদের হত্যা করে চামড়া সংগ্রহ করা হতো।


🔸 সেই চামড়া দিয়ে বানানো হতো ল্যাম্পশেড, বইয়ের কভার, চেয়ারের আবরণ।


🔸 বন্দিদের উপর অমানবিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো, অনেক ক্ষেত্রে শুধুমাত্র তার বিনোদনের জন্য।

তার এসব কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি ইতিহাসে পরিচিত হন “The Witch of Buchenwald” (বুচেনভাল্ডের জাদুকরী) এবং “The Bitch of Buchenwald” নামে।

বিচার ও শাস্তি

১৯৪৭ সালে ইলসে কোচকে নুরেমবার্গ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-এ তোলা হয়। তাকে আজীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। যদিও ১৯৪৯ সালে কিছু সময়ের জন্য মুক্তি দেওয়া হলেও জনরোষের মুখে পুনরায় গ্রেফতার হন।

১৯৬৭ সালে, কারাগারে আত্মহত্যা করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৬০ বছর

ইতিহাস কী বলে? 

ইলসে কোচের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলি রয়েছে, তার অনেকগুলো প্রমাণ আজও বিতর্কিত। কিছু ইতিহাসবিদ দাবি করেন, মানুষের চামড়ার তৈরি ল্যাম্পশেডের অস্তিত্ব প্রমাণ করা কঠিন।
তবুও, তার নির্যাতনের শত শত প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য ও ভুক্তভোগীদের বিবরণ আজও স্পষ্ট করে দেয়—তিনি ছিলেন ভয়াবহ মানসিক বিকৃতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের প্রতীক

কেন তিনি ইতিহাসে এত আলোচিত?

  • ইলসে কোচের অপরাধ ছিল কেবল নৃশংসতা নয়, বরং বিকৃত শিল্পচিন্তা দিয়ে তাকে চালানো।

  • একজন নারী, যিনি সচরাচর মাতৃত্ব বা কোমলতার প্রতীক হন, তার হাতে এত নিষ্ঠুরতা—এটাই মানুষকে চমকে দেয়।

  • তিনি প্রমাণ করেছিলেন, নৃশংসতা কেবল পুরুষের একচেটিয়া বিষয় নয়

মনস্তাত্ত্বিক দৃষ্টিতে ইলসে কোচ

মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, ইলসে ছিলেন সাইকোপ্যাথ ও স্যাডিস্ট
ক্ষমতা ও ভয় দেখানোর মাধ্যমে আনন্দ পাওয়ার প্রবণতা ছিল তার মধ্যে প্রবল। এবং সম্ভবত, দীর্ঘদিন এসএস আদর্শে বেড়ে উঠেই তিনি এই পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন।

শেষকথা: এক ভয়ঙ্কর শিক্ষা

ইলসে কোচের গল্প আজও আমাদের শিক্ষা দেয় কোনো আদর্শ বা রাজনীতি যদি মানবতাকে খর্ব করে, তাহলে মানুষ রূপ নেয় পশুর থেকেও ভয়ঙ্কর এক প্রাণীতে।
তাকে মনে রাখা উচিত, যেন এমন কোনো ইতিহাস আর না ঘটে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন