“রুনু গুহনিয়োগীর ছায়ায়” — সাতকাহনের বিশেষ ধারাবাহিক সাক্ষাৎকারে অনীল ঘোষাল (প্রাক্তন ডি.সি., কলকাতা পুলিশ)।

 

সাতকাহন ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার

পর্ব – ২

কলকাতার আন্ডারওয়ার্ল্ড আর এক কিংবদন্তির ছায়া


“রুনু গুহনিয়োগীর ছায়ায়” — সাতকাহনের বিশেষ ধারাবাহিক সাক্ষাৎকারে অনীল ঘোষাল (প্রাক্তন ডি.সি., কলকাতা পুলিশ)।

সাতকাহন:

আগের পর্বে আমরা শুনেছিলাম রুনু গুহনিয়োগীর নেতৃত্বে কাজ করা এক পুলিশের ভেতরের কাহিনি। আজ অনীল ঘোষাল আমাদের শোনাবেন সেই সময়ের গ্যাংস্টারদের আসল রূপ, আর রুনুবাবুর মৃত্যুকে ঘিরে নীরব এক ট্র্যাজেডির কথা।

অনীল ঘোষাল:
তখনকার কলকাতায় গ্যাং মানে ছিল—রক্ত, ভয় আর প্রভাব।
হেমেন মণ্ডল, তুষার হালদার, সাহেব শঙ্কর, অমিত ঘোষাল—নামে-নামে কাঁপত শহর।
হেমেনকে আমরা ধরেছিলাম চিতপুর ইয়ার্ড থেকে। সে জানত, পালালে গুলি চলবে। তাই শান্তভাবে ধরা দেয়।
তুষার হালদার—এক অন্যরকম মানুষ। ধরা পড়ার পর বলেছিল, “আমি ১৩টা ব্যাংক লুট করেছি।” তারপর কাগজ-কলম চেয়ে প্রতিটা ব্যাংকের নাম লিখে দিল! এমন ঠান্ডা মাথার অপরাধী খুব কম দেখেছি।

সাতকাহন:

তাহলে কি ওরা সবাই খারাপ ছিল?

অনীল:
না।
হেমেন মণ্ডলের মতো কেউ কেউ গরিব পাড়ার মানুষকে সাহায্য করত। ওরা নিজের এলাকায় রবিনহুড ছিল, কিন্তু পুলিশের চোখে অপরাধীই।
রুনুবাবু বলতেন,

“ভালো-মন্দ একসাথে থাকতে পারে না। যার হাতে বন্দুক, তার ভালোও বিপজ্জনক।”

“রুনু গুহনিয়োগীর ছায়ায়” — সাতকাহনের বিশেষ ধারাবাহিক সাক্ষাৎকারে অনীল ঘোষাল (প্রাক্তন ডি.সি., কলকাতা পুলিশ)।

সাতকাহন:

রুনু গুহনিয়োগীর মৃত্যুর সময় আপনি কোথায় ছিলেন?

অনীল:
আমি তখন লালবাজারে। খবরটা আসার পর পুরো বিল্ডিং নিস্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল, পুলিশের একটা যুগ শেষ হয়ে গেল।
ওঁর মৃত্যু নিয়ে অনেক কথা হয়েছে—কেউ বলেছে ষড়যন্ত্র, কেউ বলেছে দুর্ঘটনা। কিন্তু আমি বলি, রুনুবাবু কখনও মরেননি। তিনি বেঁচে আছেন আমাদের কাজের ভেতর, আমাদের সাহসের ভেতর।

“রুনু গুহনিয়োগীর ছায়ায়” — সাতকাহনের বিশেষ ধারাবাহিক সাক্ষাৎকারে অনীল ঘোষাল (প্রাক্তন ডি.সি., কলকাতা পুলিশ)।

সাতকাহন:

এই দীর্ঘ কর্মজীবনে আপনার সবচেয়ে বড় শিক্ষা কী?

অনীল:
দুটি—
এক, ভয় পেলে কাজ হয় না।
দুই, মানুষকে বুঝতে শিখো। অপরাধী হোক বা সহকর্মী, তার ভিতরটা না বুঝলে সত্যি বেরোবে না।
রুনুবাবু শিখিয়েছিলেন—“আইনের বই যেমন জরুরি, তেমনি মানুষের মনও।”

আজ এত বছর পরও, যখন কেউ বলে “রুনু গুহনিয়োগী”, আমার বুকের ভিতর একটা গর্বের ঢেউ ওঠে। আমরা শুধু একজন অফিসারের সঙ্গে কাজ করিনি—একটা সময়ের সঙ্গে কাজ করেছি।

সাতকাহন:(উপসংহার):

রুনু গুহনিয়োগী ছিলেন পুলিশের এক স্কুল। তাঁর টিমের প্রতিটি সদস্যই ছিলেন সেই সময়ের “জীবন্ত অধ্যায়”।
আজও কলকাতার লালবাজারের করিডরে নাকি কেউ কেউ বলেন — “রুনুবাবুর ছায়া এখানেই আছে।”
সম্ভবত সেই ছায়াই আজও পুলিশদের মনে সাহস জাগায়, আর সাংবাদিকদের মনে গল্পের আগুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন