২০ জুন জন্ম নেওয়া কিংবদন্তি সাংবাদিক গৌরকিশোর ঘোষ আজ ভুলে যেতে বসেছে বাঙালি। জরুরি অবস্থার প্রতিবাদে যিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন, তাকে স্মরণ করার দিন আজ।
গৌরকিশোর ঘোষ: যিনি কলম দিয়ে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন একুশ শতকের পূর্বভারত
আজ (২০শে জুন) কিংবদন্তি সাংবাদিক ও সাহিত্যিক গৌরকিশোর ঘোষ-এর জন্মদিন। অথচ আজকের দিনে খুব কম মানুষই তাকে মনে রাখে। সাংবাদিকতা, রাজনীতি বিশ্লেষণ, উপন্যাস, ব্যঙ্গরচনা, অথবা মুক্তচিন্তার সংগ্রামে — প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
গৌরকিশোর ঘোষের জন্ম ১৯২৩ সালের ২০শে জুন, যশোর জেলার (বর্তমানে বাংলাদেশে) মাগুরায়। শিক্ষাজীবন শুরু হয় যশোরেই। দেশভাগের পরে চলে আসেন কলকাতায়। কলমকে হাতিয়ার করে মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াই শুরু করেন তিনি।
সাংবাদিকতা জীবনে বিপ্লব:
তিনি ‘যুগান্তর’, ‘দেশ’, এবং পরে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র মত শীর্ষ দৈনিকে সাংবাদিকতা করেছেন। তবে শুধুমাত্র খবরে নয়, গৌরকিশোর ঘোষ সংবাদকে রূপান্তরিত করেছিলেন একধরনের সাহিত্যিক প্রতিবাদে। তাঁর কলাম “নির্বাচিত কলাম” পাঠকদের মনে প্রশ্ন জাগাতো, যুক্তি শাণিত করত।
‘নীরব প্রতিরোধ’-এর কাহিনি:
সত্তরের দশকের জরুরি অবস্থার সময়, সাংবাদিকতা যখন সরকার নিয়ন্ত্রিত, তখন গৌরকিশোর ঘোষ মাথা মুড়িয়ে এবং মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন প্রতিবাদ জানিয়ে আলোড়ন তুলেছিলেন। তাঁর এই সাহসী প্রতিবাদ বিশ্ব মিডিয়াতেও প্রশংসিত হয়।
সাহিত্যকর্ম ও পুরস্কার:
তিনি বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অবদান রেখেছেন— ছোটগল্প, উপন্যাস, আত্মজীবনী, রাজনৈতিক ব্যঙ্গ। তাঁর বিখ্যাত রচনার মধ্যে রয়েছে প্রতিপক্ষ, রাজনৈতির কৌতুক, জরুরি অবস্থার ডায়েরি প্রভৃতি।
তিনি পেয়েছেন রামন ম্যাগসেসে অ্যাওয়ার্ড, আনন্দ পুরস্কার এবং সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার।
আধুনিক প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা:
যখন সত্যের পক্ষে দাঁড়ানো কঠিন, তখন গৌরকিশোর ঘোষ যেন আজও নতুন প্রজন্মের জন্য বাতিঘর। তাঁর কলমের ভাষা যতটা ছিল সৃজনশীল, ততটাই ছিল প্রতিবাদী।


