জমে থাকা মামলার পাহাড় কমাতে কলকাতা হাইকোর্টের মিডিয়েশন কমিটির ঐতিহাসিক পদক্ষেপ



কলকাতা হাইকোর্টের মিডিয়েশন কমিটির ঐতিহাসিক পদক্ষেপ—দীর্ঘদিন জমে থাকা মামলার বোঝা কমাতে প্রশিক্ষিত মিডিয়েটরদের শংসাপত্র প্রদান ও বিকল্প বিবাদ নিষ্পত্তি কেন্দ্র গুলির সক্রিয় ভূমিকা


জমে থাকা মামলার পাহাড় কমাতে কলকাতা হাইকোর্টের মিডিয়েশন কমিটির  ঐতিহাসিক পদক্ষেপ

জমে থাকা মামলার পাহাড় কমাতে কলকাতা হাইকোর্টের মিডিয়েশন কমিটির ঐতিহাসিক পদক্ষেপ

—প্রলয় চ্যাটার্জী  (Veritas Times)


বিচারের দীর্ঘসূত্রতা ও মামলার বোঝা লাঘবে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করল কলকাতা হাইকোর্টের মিডিয়েশন ও কনসিলিয়েশন কমিটি। বুধবার সন্ধ্যাবেলা, কলকাতা হাইকোর্টের অডিটোরিয়ামে এক গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘এডভোকেট মিডিয়েটর’ এবং ‘নন-এডভোকেট মিডিয়েটর’দের শংসাপত্র প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানের নেতৃত্বে ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের মাননীয় প্রধান বিচারপতি টি. এস. শিবজ্ঞানম।



অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মিডিয়েশন কমিটির প্যাট্রন বিচারপতি সৌমেন সেন, সভাপতি বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি মধুরেশ প্রসাদ, বিচারপতি শুভ্রা ঘোষ সহ অন্যান্য বিশিষ্ট বিচারপতিরা। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মিডিয়েশন কমিটির সদস্য সচিব সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই বিশেষ দিনে শংসাপত্র প্রদান করা হয় আইনজীবী এবং অ-আইনজীবী মিডিয়েটরদের মধ্যে যারা প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন। ‘নন-এডভোকেট মিডিয়েটর’ হিসাবে সম্মাননা লাভ করেন আইনি সংবাদদাতা ও কুমুদ সাহিত্য মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোল্লা জসিমউদ্দিন সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। শংসাপত্র তুলে দেন প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিরা।

ডেপুটি রেজিস্ট্রার (লিগ্যাল) ও মিডিয়েশন কমিটির ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক ডঃ শুভাশিস মুহুরি জানান, “কলকাতা হাইকোর্ট সহ রাজ্যের বিভিন্ন আদালতে জমে থাকা মামলার জট কমাতে আমরা নিয়মিতভাবে দক্ষ মিডিয়েটর নিযুক্ত করছি।”

জমে থাকা মামলার পাহাড় কমাতে কলকাতা হাইকোর্টের মিডিয়েশন কমিটির  ঐতিহাসিক পদক্ষেপ


বিচার ব্যবস্থায় ‘তারিখের পর তারিখ’ যেন এক যন্ত্রণার নাম। বছরের পর বছর ধরে চলে মামলার শুনানি, খরচ বাড়ে litigant-দের জন্য। এই অবস্থার পরিবর্তনেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দেশজুড়ে চালু হয় ‘জাতীয় লোক আদালত’। তারই পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের মিডিয়েশন ও কনসিলিয়েশন কমিটি নিরবিচ্ছিন্নভাবে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির জন্য কাজ করে চলেছে।

মিডিয়েটরের মাধ্যমে নিস্পত্তি হচ্ছে জমি-জায়গা সংক্রান্ত মামলা, বাণিজ্যিক বিরোধ এবং দাম্পত্য দ্বন্দ্বের মতো বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এরজন্য বাদী ও বিবাদীকে কোনো অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয় না, দীর্ঘ সময়ও অপেক্ষা করতে হয় না।

জমে থাকা মামলার পাহাড় কমাতে কলকাতা হাইকোর্টের মিডিয়েশন কমিটির  ঐতিহাসিক পদক্ষেপ


বর্তমানে কলকাতা হাইকোর্ট ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ৭২টি এডিআর (বিকল্প বিবাদ নিষ্পত্তি কেন্দ্র)-এ চলেছে এই মিডিয়েশন পর্ব। সেখানে মিডিয়েটররা দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা ও সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার নিষ্পত্তি ঘটাচ্ছেন। সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যেই সেই মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে মিডিয়েশন কমিটির অফিস স্টাফ মহম্মদ নৌশাদ, আকবর আলি ও মৌসুমি মন্ডল অতিথিদের আতিথেয়তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করল। মামলার জট কমাতে ও দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া কার্যকর করতে মিডিয়েশনই হয়ে উঠছে আগামী দিনের অন্যতম ভরসা।



 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন